খুলনায় এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে। সমাজে এখনও এই রোগ নিয়ে নানা ভুল ধারণা ও ভীতি থাকলেও বাস্তব চিত্র বলছে, নীরবে ছড়িয়ে পড়ছে এই সংক্রমণ। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অ্যান্টি রেট্রোভাইরাল থেরাপি (এআরটি) সেন্টারের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, মাত্র সাত কর্মদিবসে নতুন করে ১১ জনের শরীরে এইচআইভি ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।
গত পাঁচ মাসে বিভাগের ১০ জেলার মধ্যে ৩১ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে এবং একই সময়ে ৯ জন এইডসে মারা গেছেন। এআরটি সেন্টারের কাউন্সিলর দিবেশ ওঝা জানান, ২০১৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত এখানে ২৪৯ জন রোগী এইচআইভি পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই তরুণ, যারা মূলত প্রযুক্তি-নির্ভর সোশ্যাল নেটওয়ার্ক এবং ডেটিং অ্যাপের মাধ্যমে যৌন কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খুলনার ভৌগোলিক অবস্থান এবং ভারতের সীমান্তবর্তী শহর হওয়ার কারণে এখানকার সংক্রমণের হার তুলনামূলক বেশি। মেডিকেল টেকনোলজিস্ট মো. সেলিমুজ্জামান বলেন, প্রতিমাসে ৩শ’ থেকে ৫শ’ রোগীর ভাইরাল লোড পরীক্ষা করা হয় এবং দিন দিন পজিটিভ রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
অন্যদিকে, চিকিৎসার পাশাপাশি সামাজিক স্বীকৃতির অভাব এই রোগীদের মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে। ফোকাল পারসন ডা. মো. ইকবাল হোসাইন জানান, রোগীরা সামাজিক লজ্জা ও ভয়ের কারণে চিকিৎসা নিতে চায় না, অনেক সময় তাদের খুঁজে পাওয়া যায় না। এতে করে সংক্রমণ আরও ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বাড়ছে।
সিভিল সার্জন ডা. মোছা. মাহফুজা খাতুন বলেন, ‘‘এইডস এখন আর মরণব্যাধি নয়, নিয়মিত চিকিৎসায় এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম ও স্বাস্থ্যসেবা খাতকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’’
এইচআইভি প্রতিরোধে সময়মতো পরীক্ষা, চিকিৎসা গ্রহণ এবং তথ্যভিত্তিক সচেতনতা কার্যক্রমই হতে পারে কার্যকর পদক্ষেপ। এখনই ব্যবস্থা না নিলে খুলনায় এইডস পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে।