আওয়ামী লীগের ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তকে ঘিরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেউ এই সিদ্ধান্তকে জনগণের বিজয় হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ এটিকে রাজনৈতিক সহিষ্ণুতা ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য হুমকি বলেও আখ্যায়িত করছেন।
শনিবার রাতে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের নেতৃত্বে উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়। আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল জানান, সংশোধিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন অনুযায়ী কোনো রাজনৈতিক দলও বিচারের আওতায় আসতে পারবে।
এই সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে বিজয় মিছিল করেছে আন্দোলনকারীরা। তবে পাশাপাশি দেশের বুদ্ধিজীবী, নাগরিক সমাজ ও আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে—এই সিদ্ধান্ত কি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমন না কিনা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. রাবেয়া মাহমুদ বলেন, “মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বিচার হতেই পারে, কিন্তু পুরো দল নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া গণতন্ত্রের মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক হতে পারে। বিচারে দোষী প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত একটি দলের ওপর নিষেধাজ্ঞা চাপানো, বিশেষ করে সাইবার স্পেসসহ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকেও সংকুচিত করতে পারে।”
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা যাঁরা দেশ ত্যাগ করেননি, তাঁরা বিবৃতি দিয়ে বলেন, তাঁরা বিচার প্রক্রিয়াকে সম্মান করেন, তবে দলকে গণতন্ত্রের ধারায় ফিরিয়ে আনাই হবে উত্তরণের পথ।
অন্যদিকে, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “এটি শুধু একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়, এটি ন্যায়ের জয়। দীর্ঘদিনের লড়াইয়ের ফসল।” তিনি আরও বলেন, “জুলাই আন্দোলনের লক্ষ্য ফ্যাসিবাদ বিরোধী বাংলাদেশ গড়া, কোনো নির্দিষ্ট দলের প্রতি বিদ্বেষ নয়।”
তবে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ না করে তাদের বিচারের আওতায় আনার পক্ষে মত দিয়েছেন অনেকেই। তারা মনে করেন, রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা নয়, বরং সুষ্ঠু বিচার ও গণতান্ত্রিক সংস্কারের মাধ্যমে দেশ এগোতে পারে।
এদিকে শাহবাগ অবরোধ এখনও চলছে। সেখানকার আন্দোলনকারীরা ঘোষণা দিয়েছেন, তারা ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান ছাড়বেন না। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে, জনগণ দুর্ভোগে পড়েছেন।
সাম্প্রতিক এই নিষেধাজ্ঞা দেশের রাজনীতিকে একটি নতুন মোড়ে নিয়ে গেছে। একদিকে রয়েছে ন্যায়বিচারের দাবি, অন্যদিকে গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক সহনশীলতার প্রশ্ন। এখন দেখার বিষয়—এই উত্তেজনার মধ্যে সমঝোতার কোনো পথ খুঁজে পাওয়া যায় কি না।