সরকারি চাল সংগ্রহে ব্যর্থতার কারণে রাজশাহী বিভাগের ৯১৩টি চালকলের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় চুক্তি বাতিল, নিবন্ধন স্থগিত ও জামানত বাজেয়াপ্তের মতো পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।
খাদ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, কয়েক দফা সময়সীমা বাড়িয়েও তিন মাসের মধ্যে রাজশাহী বিভাগে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চাল সংগ্রহ সম্ভব হয়নি। সরকার ৫৬ হাজার ৫০০ টন ধান এবং ১ লাখ ১১ হাজার ২৬৩ টন সিদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করলেও যথাক্রমে মাত্র ৮২৮ টন ধান ও ৯৪ হাজার ৭০৭ টন সিদ্ধ চাল সংগ্রহ করা গেছে।
বিভাগের আট জেলায় খাদ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে চুক্তিযোগ্য চালকলের সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৩০টি। তবে চুক্তি করেনি ৭৫১টি মিল, যার মধ্যে ৪৫টি ছিল অটোমেটেড মিল। চুক্তিবদ্ধ হলেও গুদামে চাল সরবরাহ করেনি ১৬২টি চালকল। এছাড়া, ৩০টি মিল মাত্র ৮০ শতাংশ এবং ৭১টি মিল ৫০ শতাংশ চাল সরবরাহ করেছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যেসব চালকল চুক্তি লঙ্ঘন করেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদের মধ্যে দুই বছরের জন্য চুক্তি বাতিল, নিবন্ধন স্থগিত এবং জামানত বাজেয়াপ্ত করার মতো শাস্তি কার্যকর হতে পারে। রাজশাহী আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মাইন উদ্দিন বলেন, “যেসব মিল ৬০ শতাংশ চাল সরবরাহ করেছে, তাদের জামানত বিশেষ বিবেচনায় ফেরত দেওয়া হবে। তবে যারা এর চেয়ে কম সরবরাহ করেছে, তারা আনুপাতিক হারে ফেরত পাবে।”
মিলারদের দাবি, সরকারি নির্ধারিত দামে ধান বিক্রি করলে প্রতি মণ অন্তত ১,০০০ টাকা লোকসান হতো। এছাড়া, চালের কেজি প্রতি ৩-৪ টাকা কম দামে বিক্রি করতে হতো, যা তাদের জন্য আর্থিকভাবে ক্ষতিকর। তবে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণায় দেখা গেছে, চালকল মালিকরা প্রতি কেজি চাল এবং এর উপজাত বিক্রির মাধ্যমে ৮-১৩ টাকা লাভ করে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, খাদ্য বিভাগের নীতিগত ত্রুটি ও বাজারের চেয়ে কম দাম নির্ধারণের কারণেই মিল মালিকদের আগ্রহ কমেছে। রাজশাহীর সিডিআইআরের প্রধান পরামর্শক সুব্রত কুমার পাল বলেন, “উপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্তের ফলে বাজারে ধান-চালের ন্যায্য দাম পাওয়া যায় না। এতে নিম্ন মানের চাল সরকারি গুদামে জমা হয়, যা ভোক্তাদের জন্য ক্ষতিকর।”
সরকার ধান সংগ্রহের নীতিতে পরিবর্তন আনার চিন্তাভাবনা করছে। বাজারদর বিশ্লেষণ করে নতুন দাম নির্ধারণ এবং প্রক্রিয়া সহজ করার বিষয়ে আলোচনা চলছে। এছাড়া, সরকার ভারত থেকে ৫০ হাজার টন চাল আমদানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা অভ্যন্তরীণ বাজারের ঘাটতি পূরণে সহায়ক হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
নতুন প্রতিবেদনে রাজশাহীর চাল সংগ্রহ সংকটের মূল কারণ এবং সরকার ও মিলারদের অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে। আপনি যদি কোনো নির্দিষ্ট দিক আরও বিশদভাবে উপস্থাপন করতে চান, জানাবেন!