শিশুর আবদার মেটাতে খেলনা কিনে দিতে গুনতে হবে বাড়তি অর্থ। নগর জীবনের অনুষঙ্গ ফ্রিজ, টিভি, এসি, ব্লেন্ডার ও জুসারের মতো পণ্য হবে আরো ব্যয়বহুল।
এমনকি ঘরে বিদ্যুৎসাশ্রয়ী বাতি ব্যবহার, মশা-মাছি-তেলাপোকার উপদ্রব থেকে রেহাই পেতেও ব্যয় বাড়বে। নিত্যপণ্যের বাড়তি দামের চাপ সামাল দিতে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত যখন হিমশিম খাচ্ছে, তখন বাজেটেও তাদের জন্য নেই স্বস্তির খবর।
আগামী ২ জুন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ যে বাজেট উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন তাতে উল্টো কর কাঠামো ও বাড়তি রাজস্ব আদায়ের পদক্ষেপ মধ্যবিত্ত শ্রেণির ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এতে আয় না বাড়লেও নানাভাবে ব্যয় কাটছাঁট করে চলা মধ্যবিত্তের জীবনযাত্রার ব্যয় আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, যারা নির্ধারিত আয়ের মানুষ, মাসিক বেতনের ভিত্তিতে কাজ করেন, যাঁদের বেতনের বাইরে বাড়তি আয় নেই, উচ্চবিত্ত বাদ দিয়ে দারিদ্র্যসীমার ওপরে যাদের বসবাস, তাঁরাই মধ্যবিত্ত। দেশের অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির নেপথ্যে থেকে বড় ভূমিকা রাখেন তারাই।
দেশের সবচেয়ে সচেতন শ্রেণি হলো মধ্যবিত্ত। এই শ্রেণিটি অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে বড় ধরনের অবদান রাখে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে প্রতিবছর বাজেটে প্রাপ্য গুরুত্ব তারা পান না। মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রধান সমস্যা হলো, তাঁদের আয় বাড়ে সীমিত হারে, অথচ ব্যয় বেড়ে চলে লাগামহীনভাবে।
নিম্ন আয়ের মানুষ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন পর্যায় থেকে সহায়তা পেলেও মধ্যবিত্ত তো তা পাচ্ছেন না। কোথাও গিয়ে হাত পাতাও তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। বাংলাদেশে মধ্যবিত্তের হার কত এবং কারা মধ্যবিত্ত, তা নিয়ে বছর দুয়েক আগে একটি গবেষণা করেছিলেন বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক বিনায়ক সেন। তাঁর গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে এখন মধ্যবিত্তের হার মোট জনগোষ্ঠীর ২০ শতাংশ। দেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ধরলে এর মধ্যে ২০ শতাংশ বা চার কোটি মানুষ মধ্যবিত্তের কাতারে।
বাংলাদেশে মধ্যবিত্তের হার যেভাবে বাড়ছে, এটি অব্যাহত থাকলে ২০২৫ সালে এ হার ২৫ শতাংশে আর ২০৩০ সালে ৩৩ শতাংশে উন্নীত হবে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপের এক গবেষণায় উঠে এসেছে, বাংলাদেশে এখন মধ্যবিত্তের সংখ্যা দেড় কোটি। প্রতিবছর ২০ লাখ করে মানুষ মধ্যবিত্তের কাতারে যুক্ত হচ্ছে। গবেষণাটি তারা করেছে বাংলাদেশিদের ভোগ্যপণ্য কেনার সামর্থ্যের ওপর ভিত্তি করে।