সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবার এবং দেশের শীর্ষস্থানীয় ১১টি শিল্প গ্রুপের বিরুদ্ধে বিদেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচারের অভিযোগে তদন্তের পর এবার সেই অর্থ ফেরত আনার আইনি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ সরকার। এই প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক চারটি খ্যাতনামা সংস্থার সহায়তা নেওয়া হচ্ছে, যারা ইতিমধ্যে পাচার হওয়া অর্থ ও সম্পদের সুনির্দিষ্ট তথ্য চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছে।
দুর্নীতি ও অর্থ পাচার প্রতিরোধে বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘের যৌথ উদ্যোগ ‘স্টোলেন অ্যাসেট রিকভারি’ (STAR), যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস, ইন্টারন্যাশনাল এন্টি করাপশন কোঅর্ডিনেশন সেন্টার (IACCC) এবং সুইজারল্যান্ডভিত্তিক আইসিএআর (ICAR) এই অনুসন্ধানে যুক্ত রয়েছে। এদের সহায়তায় যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর, হংকংসহ ১৫টি দেশে পাচার করা সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে।
তদন্তের আওতায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে এস আলম গ্রুপ, বেক্সিমকো, সিকদার গ্রুপ, আরামিট, ওরিয়ন, জেমকন, সামিট, নাসা ও নাবিল গ্রুপ। সরকারি সূত্র জানিয়েছে, এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে পাচার করা অর্থের একটি অংশের সুবিধাভোগী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবার।
বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (BFIU), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বর্তমানে পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারে তথ্য সংগ্রহ ও আইনি পদক্ষেপে কাজ করছে। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন দেশে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (MLAR) পাঠানো হয়েছে। আদালতের মাধ্যমে উদ্ধার হওয়া সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
বিশেষভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত আন্তর্জাতিক আইন ফার্মগুলোকে কোনো নগদ অর্থ দেওয়া হবে না; উদ্ধার হওয়া অর্থ থেকেই নির্ধারিত কমিশন দেওয়া হবে। এই পদক্ষেপকে সরকার ‘লিটিগেশন ফান্ড’-এর মাধ্যমে পরিচালিত করবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই উদ্যোগ সফল হলে তা শুধু পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারেই নয়, বরং ভবিষ্যতে দুর্নীতিরোধেও বড় ভূমিকা রাখবে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে দুর্নীতিবিরোধী কাঠামো শক্তিশালী করার জন্য এই ধরনের পদক্ষেপকে সময়োপযোগী হিসেবে দেখা হচ্ছে।