বাংলাদেশের সুপ্রিমকোর্টে প্রায় ১০ হাজার আইনজীবীর মধ্যে মাত্র দুজন—মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম ও আবু ইয়াহিয়া দুলাল—উচ্চ আদালতে বাংলায় মামলা দায়ের ও শুনানি পরিচালনা করেন। তবে আদালতের রায় বা আদেশের কপি এখনও ইংরেজিতে পান তারা।
বাংলা ভাষার ব্যবহার বাড়ানোর প্রয়াসে গত বছর ভাষার মাসের প্রথম দিনে ভাষাশহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে হাইকোর্টের দুটি বেঞ্চ বাংলায় রায় ঘোষণা করে। বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ সিভিল রিভিশন মামলায় বাংলায় রায় দেন। একই দিনে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্ত এবং একটি বহুমুখী সমিতির নির্বাচন সংক্রান্ত রিট মামলার রায় বাংলায় প্রদান করেন। এছাড়া কয়েকটি মামলায় বাংলায় আদেশও দেওয়া হয়।
বাংলা ভাষার প্রচলন নিয়ে উচ্চ আদালতের আরও কিছু নির্দেশনা রয়েছে। বেতার ও টেলিভিশনে বাংলা ভাষার বিকৃত উচ্চারণ এবং দূষণ রোধে হাইকোর্ট ২০১২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি এবং ২০১৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি দুটি নির্দেশনা জারি করে। এর মধ্যে একটি স্বতঃপ্রণোদিত এবং অপরটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দেওয়া হয়।
সুপ্রিমকোর্টের রায় বাংলায় সহজে অনুবাদের জন্য ২০২১ সালে ‘আমার ভাষা’ নামের একটি সফটওয়্যার চালু করা হয়। ভাষাশহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিমকোর্টের ওয়েবসাইটের বাংলা সংস্করণও চালু করা হয়। সুপ্রিমকোর্টের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম জানান, এই সফটওয়্যার ব্যবহার করে হাইকোর্ট বিভাগের ইংরেজি রায় বাংলায় অনুবাদ করা হচ্ছে এবং তা ওয়েবসাইটে আপলোড করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত হাইকোর্ট বিভাগের ৩৪টি ও আপিল বিভাগের ১১টি রায় বাংলায় প্রকাশ করা হয়েছে।
সুপ্রিমকোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও বার কাউন্সিলের সদস্য শাহ মো. খসরুজ্জামান মনে করেন, বিচার বিভাগে বাংলা ভাষার ব্যবহার আরও বাড়ানো প্রয়োজন। তিনি বলেন, ভাষাশহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আদালতের সব পর্যায়ে বাংলার প্রচলন নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থায় বাংলা ভাষার ব্যবহার বাড়াতে উদ্যোগ নেওয়া হলেও এখনও তা সীমিত পরিসরে রয়েছে। তবে ‘আমার ভাষা’ সফটওয়্যারের ব্যবহার এবং হাইকোর্টের কিছু বেঞ্চের উদ্যোগ ভবিষ্যতে এর প্রয়োগ আরও বাড়াতে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।