বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন অধ্যায় রচনা করতে আত্মপ্রকাশ করল জাতীয় নাগরিক পার্টি (জানাপা)। শুক্রবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে আয়োজিত এক গণসমাবেশে দলের আনুষ্ঠানিক যাত্রা ঘোষণা করা হয়। নতুন এ রাজনৈতিক দলটি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সুস্থ ধারার রাজনীতি গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “বাংলাদেশে বিভাজন তৈরি করে দেশকে দুর্বল করে রাখার ষড়যন্ত্র হয়েছিল, যা আমরা জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের মাধ্যমে রুখে দিয়েছি।” তিনি আরও বলেন, “এখন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হলে ভারতপন্থি কিংবা পাকিস্তানপন্থি রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমরা শুধুমাত্র বাংলাদেশ ও জনগণের স্বার্থকে সামনে রেখে রাজনীতি করব।” জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকেই দেশে নতুন রাজনৈতিক শক্তির প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছিল। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম একটি বিকল্প রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মের দাবি জানিয়ে আসছিল। নাহিদ ইসলাম বলেন, “তখন ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে স্লোগান উঠেছিল: তুমি কে আমি কে? বিকল্প বিকল্প। আজ সেই বিকল্পের জায়গা থেকেই জাতীয় নাগরিক পার্টির আত্মপ্রকাশ।”
দল ঘোষণার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ মো. ইসমাইল হাসান রাব্বির বোন মিম আক্তার। তিনি বলেন, “আপনারা নিশ্চয়ই মনে রেখেছেন, গত ৫ আগস্ট দুই বোনের কাঁধে ভাইয়ের লাশ ছিল। ইতিহাসে এমন ঘটনা আগে ঘটেনি। সেই আত্মত্যাগের ভিত্তিতেই ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে আমরা জাতীয় নাগরিক পার্টির নাম ঘোষণা করছি।”
নতুন রাজনৈতিক দলটি গণমানুষের স্বার্থে কাজ করবে বলে জানিয়েছে। আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমরা জনগণের জন্য রাজনীতি করব, গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করব, এবং সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় লড়াই করব।” দলটির অন্যতম লক্ষ্য হবে বৈষম্য দূর করা, সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা এবং তরুণ নেতৃত্বকে রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসা। নতুন দলে তরুণ নেতৃত্বকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন নাহিদ ইসলাম। সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হয়েছেন সামান্তা শারমিন ও আরিফুল ইসলাম আদীব। সদস্য সচিব করা হয়েছে আখতার হোসেনকে। এছাড়া সাংগঠনিক পর্যায়ে হাসনাত আবদুল্লাহ (দক্ষিণাঞ্চল) ও সারজিস আলম (উত্তরাঞ্চল) মুখ্য সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন।
গণসমাবেশে অংশ নেওয়া সমর্থকরা বলছেন, দেশের প্রচলিত রাজনীতিতে পরিবর্তন আনার জন্য তারা জাতীয় নাগরিক পার্টির ওপর ভরসা রাখছেন। তারা চান, এই দলটি গঠনমূলক রাজনীতি করবে এবং দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করবে। অনুষ্ঠানে জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ পরিবারের সদস্য, আহত আন্দোলনকারী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, কূটনীতিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। নতুন দলটি জনগণের পাশে দাঁড়াবে, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য লড়বে—এমন প্রত্যাশা জানিয়েছেন আগতরা।