নির্মাণাধীন ভবনে ওয়াসার পানির বিলের হয়রানি বন্ধ করা ও নির্মাণ ট্যারিফ নির্ধারণের বিষয়ে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহজাহান মিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেছেন রিহ্যাব নেতারা। শনিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার ওয়াসার কার্যালয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে রিহ্যাব প্রেসিডেন্ট মো. ওয়াহিদুজ্জামানের নেতৃত্বে সংস্থাটির একটি প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করে।
প্রতিনিধিদলে রিহ্যাবের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট লিয়াকত আলী ভূইয়া, ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রকৌশলী আবদুল লতিফ ও পরিচালক মো. আইয়ূব আলী উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে ৫টি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে, সেগুলো হলো-
১. ওয়াসা বিলে দুইটি ট্যারিফ রয়েছে অর্থাৎ আবাসিক ও বাণিজ্যিক। নির্মাণ কাজের জন্য কোনো ট্যারিফ নির্ধারিত না থাকায় নির্মাণাধীন প্রকল্পে বাণিজ্যিক হিসেবে বিল পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু নির্মাণাধীন প্রকল্পের পানি ব্যবহার ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবহার একই ধরনের নয়। নির্মাণাধীন প্রকল্পের জন্য আবাসিক ও বাণিজ্যিক ট্যারিফের মাঝামাঝি রেট নির্ধারণের জন্য অনুরোধ জানানো হয়।
২. খালি প্লটে নির্মাণকালীন স্যুয়ারেজ লাইন থাকে না এবং পুরাতন স্থাপনা ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণকালীন সুয়্যারেজ লাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং ওই সময়ে অস্থায়ী টয়লেট তৈরি করে নির্মাণ কাজ পরিচালনা করা হয়। এসব ক্ষেত্রে যেখানে ব্যবহৃত পানি সুয়্যারেজ লাইনে প্রবেশের কোনো সুযোগ থাকে না তথাপি ওয়াসাকে নির্মাণকালীন স্যুয়ারেজ ব্যবহার না করেও দ্বিগুণ হারে বিল পরিশোধ করতে হয়, যা যুক্তিযুক্ত নয়। নির্মাণাধীন প্রকল্পের জন্য স্যুয়ারেজ বাদে বিল ইস্যু করার ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।
৩. আবাসিক বাড়ি ভেঙে নির্মাণ কাজ শুরু করলে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাণিজ্যিক রেটে মিটারের রিডিং অনুযায়ী বিল ইস্যু করে। কিন্তু নির্মাণ কাজ শেষে আবাসিক হিসেবে ব্যবহার শুরু করা হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আবাসিক বিল ইস্যু করা হয় না। এক্ষেত্রে আবাসিকে রূপান্তরের জন্য আবেদন করলে ছাদ মাপে প্রতি বর্গফুট হিসেবে বিল করে গ্রাহককে হয়রারি করা হয় ও অবৈধ সুবিধা দাবি করা হয় এবং ওই দাবি পূরণ না করলে মাসের পর মাস বাণিজ্যিক হিসেবে বিল পরিশোধে বাধ্য করা হয়, যা কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়। অতএব, নির্মাণ কাজ শেষে ভবনের ছাদ মাপে প্রতি বর্গফুট হিসেবে বিল করার বিষয়টি বাতিল করার জন্য অনুরোধ করা হয়।
৪. বর্তমানে ওয়াসা কর্তৃপক্ষের সরবরাহকৃত মিটারগুলো খুবই নিম্নমানের। এই নিম্নমানের মিটারগুলো ৬ মাস না যেতেই মিটারের ডিসপ্লে নষ্ট হয়ে যায় এবং কিছু অসাধু রিডিংম্যান এর সুযোগ নিয়ে ইচ্ছামতো বিল ধরিয়ে দেয় অথবা কিছু অনৈতিক সুবিধার বিনিময়ে রিডিং কম দেখিয়ে বিল ইস্যু করেন এবং এতে সরকার যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তেমনি গ্রাহকরাও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই ওই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়।
৫. রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের যেসব এলাকায় ওয়াসার লাইন নেই, সেসব এলাকায় সাবমার্সিবল পাম্প বসিয়ে নির্মাণ কাজ করলেও ওয়াসা কর্তৃপক্ষ বড় আকারের বিল ইস্যু করে এবং ওই বিল পরিশোধ করতে বাধ্য করা হয়। যেহেতু এখানে ওয়াসা কর্তৃপক্ষের কোনো লাইনই নেই, সেহেতু কোনোভাবেই এই বিল করা যুক্তিযুক্ত নয়। অতএব, যেসব এলাকায় ওয়াসার লাইন নেই, সেসব এলাকায় ওয়াসা বিল না করার নির্দেশ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়।
বৈঠকে ওয়াসার এমডি মনযোগ সহকারে রিহ্যাব এর দাবিগুলো শোনেন এবং তিনি বলেন, ওয়াসার আগামী বোর্ড মিটিং এ রিহ্যাব এর দাবিগুলো এজেন্ডায় ওঠানো হবে । এই দাবির বাহিরে অন্য কোন দাবি থাকলে তা নিয়ে ওয়াসার উর্দ্ধতন একজন কর্মকর্তা রিহ্যাব এর একজন প্রতিনিধির সাথে বিষয়গুলো নিয়ে আলাপ আলোচনা করে সুরাহা করবেন এমন প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।