বায়ুদূষণে বিশ্ব র্যাংকিংয়ে পঞ্চম অবস্থানে রাজধানী বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তন ও নগরায়নের প্রভাবে বায়ুদূষণ উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। বিশেষ করে ঘনবসতিপূর্ণ ও শিল্পায়নের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা শহরগুলোতে বায়ুর মান দ্রুত অবনতি ঘটছে। এই তালিকায় অন্যতম ভুক্তভোগী হচ্ছে বাংলাদেশ, যার রাজধানী ঢাকা নিয়মিতভাবেই দূষিত শহরগুলোর শীর্ষ তালিকায় উঠে আসে।
শুক্রবার (২১ মার্চ) সকাল ৮টায় বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (আইকিউএয়ার) প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ঢাকার বাতাসের একিউআই স্কোর ১৮০, যা ‘অস্বাস্থ্যকর’ ক্যাটাগরিতে পড়ছে। তবে অন্যান্য দিনের তুলনায় এদিন দূষণের মাত্রা কিছুটা কম থাকায় ঢাকা পঞ্চম স্থানে রয়েছে।
বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বাতাসের শহর হিসেবে রয়েছে ভিয়েতনামের হ্যানয়, যার একিউআই স্কোর ২০৯। দ্বিতীয় স্থানে আছে পাকিস্তানের লাহোর (একিউআই ১৯৫) এবং তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ভারতের দিল্লি (একিউআই ১৯০)। চতুর্থ স্থানে রয়েছে মঙ্গোলিয়ার উলানবাটর, যেখানে একিউআই স্কোর ১৮৫।
বায়ুর মান সূচকে ০-৫০ স্কোরকে ‘ভালো’, ৫১-১০০ স্কোরকে ‘মাঝারি’ এবং ১০১-১৫০ স্কোরকে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে ধরা হয়। এর উপরে ১৫১-২০০ স্কোর হলে তা ‘অস্বাস্থ্যকর’, ২০১-৩০০ হলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং ৩০১-এর বেশি হলে ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে— নির্মাণকাজ, যানবাহনের ধোঁয়া, শিল্প কারখানার নির্গমন, রাস্তার ধুলো ও ইটভাটার দূষণ। বিশেষ করে শীতকালে বায়ুর প্রবাহ কম থাকায় ক্ষুদ্র বস্তুকণা (PM2.5) বাতাসে দীর্ঘসময় ভেসে থাকে, যা শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে, বায়ুদূষণের ফলে স্ট্রোক, হৃদরোগ, ফুসফুসের ক্যান্সার, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (COPD) ও শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। প্রতিবছর বিশ্বে আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষ বায়ুদূষণজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে বৈজ্ঞানিক পরিকল্পনা ও কঠোর আইন প্রয়োগ জরুরি। যানবাহনের ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণ, নির্মাণকাজে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, সবুজায়ন বৃদ্ধি ও শিল্প-কারখানায় দূষণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জোরদার করলেই ঢাকার বায়ুর মান উন্নত করা সম্ভব হবে।