বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে সার্ভিল্যান্স কার্যক্রমে ব্যবহৃত সফটওয়্যারের অবৈধ সংযোগ দিয়ে তথ্য পাচার, অর্থ আত্মসাৎসহ প্রকল্প বাস্তবায়নে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে অভিযান পরিচালনা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল এ অভিযান পরিচালনা করেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা। এর আগে গত সপ্তাহে বিএসইসির আইপিও বিভাগে অভিযান চালিয়েছিল দুদক।
এছাড়া অভিযানকালে এডিবির অর্থায়নে ক্যাপিটাল মার্কেট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (সিএমডিপি) শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে আরআইএস সফটওয়্যার সিস্টেম বাস্তবায়ন কার্যক্রমের প্রকল্পসংক্রান্ত তথ্য খতিয়ে দেখে এনফোর্সমেন্ট টিম। টিম জানতে পারে, ২০১৮ সালে গৃহীত প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২৪ সালে শেষ হয়। কিন্তু সরজমিন পরিদর্শন ও সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য পর্যালোচনায় প্রায় ২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে গৃহীত প্রকল্পটির প্রজেক্ট কমপ্লিশন রিপোর্ট (পিসিআর) সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে দাখিল করা হলেও আরআইএস সফটওয়্যারটি এখনো ইনস্টল ও হস্তান্তর করা হয়নি মর্মে টিম প্রত্যক্ষ করে। সার্বিক বিবেচনায় ওই প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়ম হয়েছে মর্মে এনফোর্সমেন্ট টিমের কাছে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়। টিম কর্তৃক সংশ্লিষ্ট অন্যান্য তথ্যাদি সংগ্রহ ও যাচাইপূর্বক অভিযানকালে প্রাপ্ত অনিয়মগুলোর বিষয়ে কমিশন বরাবর একটি পূর্ণাঙ্গ এনফোর্সমেন্ট প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
এর আগে গত সপ্তাহে বিএসইসিতে প্রথমবারের মতো দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে অভিযান চালিয়েছিল দুদক। সে সময় দুদক টিম বিএসইসি থেকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) অনুমোদনসংক্রান্ত বিষয়ে কোম্পানির আবেদনের তালিকা, তাদের দাখিলকৃত প্রসপেক্টাস, নিরীক্ষা রিপোর্ট ও প্রয়োজনীয় অন্যান্য কাগজপত্র ও চূড়ান্ত অনুমোদন তালিকা যাচাই করে। ২০১০ সাল-পরবর্তী দুই কমিশনের মেয়াদের অনিয়ম ও দুর্নীতির অনেক প্রমাণ পেয়েছেন তারা। প্রাপ্ত অনিয়মগুলোর বিষয়ে দুদক টিম প্রয়োজনীয় রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে কমিশন বরাবর একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করবে বলে সে সময় জানিয়েছিল।
এক্ষেত্রে বিভিন্ন কোম্পানির প্রসপেক্টাসে থাকা আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্যেও ম্যানিপুলেট করা হয়। আর্থিক অবস্থা দুর্বল থাকা কোম্পানিকে সবল দেখানো হয়। তারপর মার্কেটে ছাড়া হয় আইপিও। সেই কোম্পানি অব্যাহত প্রবৃদ্ধিও করেছে। তারপর একপর্যায়ে তাদের শেয়ারদর পড়তে শুরু করে। এতে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি হয়। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে বিভিন্ন সময় এসব কোম্পানির বিষয়ে সতর্ক করে সুপারিশ করা হলেও বিএসইসি তা আমলে নেয়নি। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের অনুসন্ধানের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছে দুদক সূত্র।
কোম্পানির দাখিলকৃত ফ্যাব্রিকেটেড আর্নিংস অ্যান্ড অ্যাসেটস বিবরণী ও উইন্ডো ড্রেসিংয়ের মাধ্যমে তৈরীকৃত ব্যালান্সশিটের বিপরীতে আইপিও অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে অনেক ক্ষেত্রে ডিএসইর সুপারিশ ও অবজারভেশন বিবেচনা করা হয়নি, যা ব্যাপক অনিয়মের ক্ষেত্র তৈরি করেছে। এছাড়া প্রাইভেট প্লেসমেন্ট জালিয়াতি ও বাণিজ্য, অধিক মূল্যে শেয়ার প্রাইস নিয়ে মার্কেটে প্রবেশ ও অল্প সময়ে শেয়ার বিক্রি এবং প্রাইসের দ্রুত অবনমনের পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়ার বিষয়টিও পরিলক্ষিত হয়েছে।
দুদক জানায়, বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনায় টিম আরো প্রত্যক্ষ করে যে দুর্বল কোম্পানিগুলোকে অবৈধভাবে অনুমোদন দেয়ায় ক্যাপিটাল মার্কেটে প্রবেশের অল্পদিনেই তাদের লো পারফর্মিং কোম্পানি হিসেবে জেড ক্যাটাগরিভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া জালিয়াতির মাধ্যমে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টের প্রস্তুতকৃত উইন্ডো ড্রেসড ব্যালান্সশিট ও ফ্যাব্রিকেটেড আর্নিং রিপোর্ট ও ইস্যু ম্যানেজারের তৈরীকৃত ওভারভ্যালুড কোম্পানি প্রোফাইলের পরিপ্রেক্ষিতে অনিয়মের আশ্রয়ে বিএসইসি আইপিওর অনুমোদন দিয়েছে।