বিপুল পরিমান বিমাদাবি নিষ্পত্তি না হওয়ার কারণে বিভিন্ন অনিয়ম সংগঠিত হওয়ার বিষয়ে সন্দিহান হয়ে দেশের ১৫ টি লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানিতে ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিশেষ নিরীক্ষার জন্য অডিট ফার্ম নিয়োগ করেছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।
নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সুনির্দিষ্ট কিছু মানদণ্ডের উপর ভিত্তি করে তাদের একটি অভ্যন্তরীণ গ্রেডিং সিস্টেম রয়েছে। যা চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে শেষ হয়েছে।
সেই মূল্যায়নে এই ১৫টি কোম্পানি সবচেয়ে দুর্বল পারফর্মার হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল। এই কারণেই এখন এই কোম্পানিগুলোতে বিশেষ নিরীক্ষা করা হচ্ছে, বলেন তিনি।
বিশেষ নিরীক্ষা নিয়মিত নিরীক্ষার চেয়ে ভিন্ন। যেখানে সুনির্দিষ্ট সমস্যা বা ক্ষেত্রকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে নিরীক্ষা করা হয়। যেমন, কোনো কোম্পানির আর্থিক অনিয়ম বা দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে, সেই বিষয়ে বিশেষ নিরীক্ষা করা হয়।
আইডিআরের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের শেষে এই ১৫ টি কোম্পানির কাছে গ্রাহকদের বিমাদাবির পরিমান ৪,৬১৫ কোটি টাকা, আর এর বিপরীতে কোম্পানিগুলো মাত্র ৬৩৫ কোটি টাকার দাবি পরিশোধ করেছে। জানা গেছে, গত রবিবার আইডিআরএ এই বিশেষ নিরীক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য ভিন্ন ভিন্ন ১৫ টি অডিট ফার্মকে নিয়োগ করেছে। অন্যদিকে নিযুক্ত হওয়ার ৩০ কার্য দিবসের মধ্যে ফার্মগুলোকে তাদের নিরীক্ষা প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, কোম্পানিগুলো বীমা আইন ২০১০ অনুসারে পরিচালিত হচ্ছে কিনা তাও যাচাই করে দেখা হবে নিরীক্ষার সময়।
কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স, হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স, পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, প্রোগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স, প্রোটেক্টিভ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, বেস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স এবং প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স।
তালিকায় আরও রয়েছে যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ডায়মন্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স, স্বদেশ লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সানফ্লাওয়ার লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, গোল্ডেন লাইফ ইন্স্যুরেন্স, বায়রা লাইফ ইন্স্যুরেন্স এবং এনআরবি ইসলামিক লাইফ ইন্স্যুরেন্স।
এদিকে দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে দীর্ঘদিন ধরে আর্থিক সংকটে ভুগতে থাকা প্রতিষ্ঠান ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স ব্যয় কমাতে গাড়ি বিক্রি ও কর্মী ছাঁটাই করেছে।
আইডিআরএ-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কোম্পানিটির কাছে গ্রাহকের পাওনা ছিল ২ হাজার ৯৪৬ কোটি টাকা, যার মধ্যে মাত্র ১৯৪ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে কোম্পানিটি। সে হিসেবে গত বছর মোট বিমা দাবির মাত্র ৬ শতাংশ কোম্পানিটি পরিশোধ করেছে। এই নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা হবে, বলেন তিনি।
এদিকে বিমা কোম্পানিগুলোর মালিকদের সমিতি বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রথম সহ-সভাপতি এবং ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের স্পনসর ডিরেক্টর আদিবা রহমান বলেন, এই খাতে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করার জন্য বিশেষ নিরীক্ষার উদ্যোগটি আইডিআরের একটি ভালো উদ্যোগ।
তিনি বলেন, শৃঙ্খলা না ফিরলে এই খাতের প্রতি গ্রাহকদের আস্থা বৃদ্ধি পাবে না। গ্রাহকদের আস্থা বৃদ্ধি না পেলে এই খাত সামনে এগিয়ে যাবে না। দেশে বর্তমানে ৮২টি বীমা কোম্পানি রয়েছে, এরমধ্যে ৩৬টি লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি ও ৪৬টি নন-লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি।