কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দিন দিন বাড়ছে চিকিৎসকের অবহেলা আর ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর সারি। চিকিৎসক ও লোকবল না থাকায় ভেঙে পড়েছে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা, বন্ধ ইনস্টিটিউট অব কমিউনিটি অফথলমলজি (আইসিও) সেবা! রোগী ও তাদের স্বজনদের কাছে এখন আতঙ্কের নাম হয়ে উঠেছে সরকারি এই স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানটি।
হাসপাতালটিতে ৩৪টি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পদ খালি, মিলছে না সেবা, আতঙ্কে রোগীরা। হাসপাতালটিতে ৩৪টি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পদ খালি, মিলছে না সেবা, আতঙ্কে রোগীরা। ছবি: সময় সংবাদ সবশেষ গত বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) চিকিৎসকদের অবহেলায় চিকিৎসাধীন এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। দুপুরে হঠাৎ শ্বাস কষ্টে কেবিনে ভর্তি থাকা এক রোগী মারা যান। স্বজনরা ডাক-চিৎকার করেও কোনো চিকিৎসক কিংবা নার্সকে কাছে পায়নি। এ নিয়ে চলতি বছরেই অবহেলাজনিত কারণে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, ডাক্তারসহ প্রয়োজনীয় লোকবল না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে হাসপাতালটির আইসিও এবং ইউরোলজি বিভাগ। মিলছে না প্রয়োজনীয় ওষুধ। কোনো রকমে চলছে জেলার একমাত্র সরকারি এই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা। ফলে সেবা বঞ্চিত সাধারণ মানুষ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল থেকে হাসপাতালের টিকিট কাউন্টার ও ডাক্তারদের কক্ষের সামনে লেগে থাকে রোগীদের দীর্ঘ লাইন। সকাল গড়িয়ে দুপুর হলেও মেলে না ডাক্তারের দেখা। প্রতিদিন দেড় হাজারেরও বেশি মানুষ চিকিৎসা সেবা নিতে জড়ো হলেও পর্যাপ্ত ডাক্তার ও ওষুধ না থাকায় বেশির ভাগকেই ফিরতে হয় খালি হাতে জানা গেছে, ১২৩ জন চিকিৎসক পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ৮৯ জন।
২৯৯ জন দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীর মধ্যে ৯১টিই খালি। হাসপাতালে ৩৪টি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পদ খালি। ১০টি চিফ কনসালটেন্ট পদের সবগুলো খালি। ১২টি সিনিয়র কনসালটেন্ট পদের মধ্যে আছেন মাত্র ৩ জন। রেজিস্ট্রার, সহকারি রেজিস্ট্রার ও এনেসথেসিয়া ডাক্তার নেই দীর্ঘদিন।
চিকিৎসক-নার্সসহ তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির ১৪৮টি পদই শূন্য। চিকিৎসক ও এনেসথেসিয়া ডাক্তার এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম না থাকায় বন্ধ রয়েছে হাসপাতালের আইসিও সেবা। শতাধিক ডায়ালাইসিস রোগীর বিপরীতে শয্যা আছে মাত্র ৫টি। ৩০ শয্যার সিসিও ইউনিটে প্রতিদিন ভর্তি থাকেন অন্তত ৬০ জন রোগী। ৫০০ শয্যার হাসপাতালে ভর্তি থাকেন সাড়ে প্রায় ৭০০ রোগী। ফলে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত সাধারণ মানুষ।
চিকিৎসকরা জানান, জনবল সংকট থাকায় চিকিৎসা সেবা দিতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। বারবার মন্ত্রণালয়ে চিঠি চালাচালি করেও কোনো প্রতিকার মিলছে না। একদিকে লোকবলের অভাব অন্যদিকে কর্মরত ডাক্তার-নার্সদের দায়িত্বে অবহেলা ও ভুল চিকিৎসায় স্বস্তির বদলে শঙ্কা দেখা দিয়েছে হাসপাতালটি ঘিরে।
শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজে হাসপাতালের পরিচালক হেলিশ রঞ্জন সরকার জানান, হাসপাতালে ডাক্তারসহ লোকবলের ঘাটতি থাকায় কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি বলেন, লোকবল নিয়োগের জন্য বারবার মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হলেও কোনো কাজ হচ্ছে না। অবহেলা ও ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর বিষয়ে তিনি বলেন, দুটি ঘটনার জড়িত নার্সকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার যশোদল এলাকায় ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। তবে হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা শুরু হয় ২০২০ সালে।