দেশের অর্থনীতির অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ মূল্যস্ফীতি, যা দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে চলতি বছরের শুরুতেই এ নিয়ে কিছুটা স্বস্তির খবর এসেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)-এর প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে, যা ডিসেম্বরের তুলনায় শূন্য দশমিক ৯৫ শতাংশ কম। বিশেষ করে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে বড় ধরনের স্বস্তি লক্ষ্য করা গেছে। ডিসেম্বরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৯২ শতাংশ, যা জানুয়ারিতে কমে ১০ দশমিক ৭২ শতাংশে নেমে এসেছে। অর্থাৎ মাসিক হিসেবে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমেছে ২ দশমিক ২০ শতাংশ। খাদ্যদ্রব্যের উচ্চমূল্য সাধারণ জনগণের সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার কারণ হওয়ায়, এই কমতি কিছুটা হলেও স্বস্তি এনে দিয়েছে।
যদিও খাদ্যপণ্যের দামে কিছুটা শিথিলতা এসেছে, তবে অখাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রে উল্টো প্রবণতা দেখা গেছে। ডিসেম্বরে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ২৬ শতাংশ, যা জানুয়ারিতে সামান্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৩২ শতাংশে। অর্থাৎ খাদ্যদ্রব্যের দামের নিম্নগতি থাকলেও অন্যান্য খরচে কিছুটা ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা গেছে। গ্রাম ও শহরাঞ্চলে মূল্যস্ফীতির চিত্র কিছুটা ভিন্ন। গ্রামাঞ্চলে জানুয়ারি মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে হয়েছে ১০ দশমিক ১৮ শতাংশ, যেখানে ডিসেম্বরে তা ছিল ১১ দশমিক ০৯ শতাংশ। খাদ্য মূল্যস্ফীতি গ্রামাঞ্চলে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৬১ শতাংশ এবং খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৭৭ শতাংশ।
অন্যদিকে, শহরাঞ্চলে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে হয়েছে ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ। খাদ্য মূল্যস্ফীতি শহরে ১০ দশমিক ৯৫ শতাংশ হলেও খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সামগ্রিক অর্থনীতিতে ভারসাম্য আনতে হলে শুধুমাত্র খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমানো যথেষ্ট নয়, বরং খাদ্যবহির্ভূত খাতেও স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। সরকারের নীতিগত হস্তক্ষেপ এবং সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নতি এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। অর্থনীতিবিদদের মতে, সরবরাহ চেইন মজবুত করা, আমদানি নির্ভরতা কমানো এবং কৃষিখাতে উৎপাদনশীলতা বাড়ানো গেলে মূল্যস্ফীতির চাপ আরও কমতে পারে। এখন দেখার বিষয়, সামনের মাসগুলোতে এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকে কি না।