আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) ঋণচুক্তির শর্ত বাস্তবায়নে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। সংস্থাটির বেশ কিছু শর্ত দেশের অর্থনীতির ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে বলে সরকার মনে করছে। ফলে ঋণের কিস্তি ছাড়ের বিষয়টি ধীরগতিতে এগোচ্ছে।সূত্র জানায়, আইএমএফের ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি একসঙ্গে ছাড় করতে জুন মাস নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে, সংস্থাটির একটি প্রতিনিধি দল ৬ এপ্রিল বাংলাদেশ সফরে আসবে। তারা ঋণের শর্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি মূল্যায়ন করবে এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করবে।
২০২২ সালে তীব্র ডলার সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকার আইএমএফের কাছে ঋণ চায়। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে বাংলাদেশ প্রথম তিন কিস্তিতে মোট ২৩১ কোটি ডলার পায়। তবে, চতুর্থ কিস্তির অর্থ গত ডিসেম্বরে পাওয়ার কথা থাকলেও তা এখনো আটকে আছে। আইএমএফের তিনটি প্রধান শর্ত—ডলারের দাম বৃদ্ধি, বিদ্যুতের দাম সমন্বয় এবং কর আদায় বাড়ানো—সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে, ডলারের দাম বাড়ালে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়তে পারে। তবে একইসঙ্গে আমদানি ব্যয়ও বেড়ে যাবে, যা মূল্যস্ফীতি বাড়াবে। ইতোমধ্যে সরকার দুই দফায় ডলারের দাম বাড়িয়ে ১২২ টাকা করেছে, যা বাজার পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
বিদ্যুতের দাম বাড়ানো নিয়েও সরকার সংযত নীতি গ্রহণ করেছে। ভর্তুকি কমানোর জন্য আইএমএফের চাপ থাকলেও সরকার মনে করে, বিদ্যুতের দাম বাড়ালে শিল্প উৎপাদন ব্যয় এবং জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে যাবে, যা মূল্যস্ফীতি বাড়ানোর আশঙ্কা তৈরি করবে। কর আদায় বাড়ানো আইএমএফের অন্যতম প্রধান শর্ত। তবে সরকার বলছে, সাধারণ জনগণের ওপর করের বোঝা না বাড়িয়ে নতুন করদাতাদের আওতায় এনে রাজস্ব বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হবে। আগামী বাজেটে এ বিষয়ে দিকনির্দেশনা থাকতে পারে।
এদিকে, আইএমএফও বাংলাদেশকে ঋণ দিতে আগ্রহী। কারণ, সংস্থাটির কঠিন শর্তের কারণে অনেক দেশ ঋণ নিতে অনাগ্রহী হয়ে পড়েছে। ফলে আইএমএফ কিছু শর্ত শিথিল করেও বাংলাদেশকে ঋণ দিতে চাইছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার আইএমএফের ঋণচুক্তি থেকে সরাসরি বেরিয়ে আসতে চায় না। তবে শর্ত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দেশের অর্থনীতি ও জনগণের ওপর চাপ যাতে না বাড়ে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে চাইছে।