বাজারে কারসাজি করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম তাণ্ডব চালানো সর্বসময়ের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে পেঁয়াজ ও ভোজ্যতেলের অযৌক্তিক উছলো-পাঠল খেয়াল করলেই বোঝা যায় যে একটি সুসংগঠিত সিন্ডিকেট ভোক্তা নির্যাতন করছে। সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা কাগজে বেড়া দিয়ে হুঁশিয়ারি দিলেও মাঠের পর্যায়ে তৎপরতা নেই বলেই অভিযোগ বাড়ছে।
সচিবালয়ের এক ব্রিফিংয়ে কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, পেঁয়াজের মূল্যে অনৈতিক হেরফের হয়েছে; অপরাধীদের সন্ধান করা হবে। বাণিজ্য উপদেষ্টা জানিয়েছেন, তেলের মূল্য বাড়ানোর জন্য মন্ত্রণালয়ের কোনো অনুমতি নেই—তবু বাজারে দাম বৃদ্ধি কার্যকর হয়েছে।
মার্কেট মনিটরিং ব্যবস্থার ভঙ্গুরতা কোনো কসুর নয়; প্রতিনিয়ত বাজার পর্যবেক্ষণ ও ত্বরিত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি উঠেছে। ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, আন্তর্জাতিক বাজার ও আমদানির পরিস্থিতি বিবেচনা করে দাম বাড়ানো হলে সেটি বৈধ, কিন্তু হঠাৎ করে ভোক্তা বঞ্চনা করা হলে তা দণ্ডনীয়। আমদানির ঘোষণা ও দাম কমার ঝলক দেখালেও বাজারে আবার সরবরাহ কমে যাওয়ার ঘটনা লক্ষ্য করা গেছে।
কৃষক, আমদানিকারক ও পাইকারি সবাই একে অপরের ওপর আঙুল তুলছেন; ফলে ভোক্তা জমিতে পড়েছে। কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন ভোক্তা অধিকার রক্ষায় কড়া পদক্ষেপ ও স্বচ্ছ তদন্ত দাবি করেছে। ট্যারিফ কমিশন পরামর্শ দিচ্ছে দীর্ঘমেয়াদী সংরক্ষণব্যবস্থা ও সরবরাহশৃঙ্খল শক্ত করার জন্য।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব, মৌসুমি সরবরাহের ফাঁক এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য মিলে এমন পরিস্থিতি জন্মে। এখন সময়—দ্রুত, স্বচ্ছ তদন্ত এবং কড়া কার্যকর নীতির; নাহলে ভোক্তার আস্থার ক্ষতি অনিবার্য। সরকারকে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করে সিন্ডিকেট চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের পাশাপাশি প্রযুক্তি নির্ভর বাজার মনিটরিং দ্রুত চালু করতে হবে। অনলাইন রেজিস্ট্রি, দৈনিক মূল্যসূচি ও হটলাইন থাকলে গোপন আঁতাত খুঁজে বের করা সহজ হবে। সংরক্ষণযোগ্য নীতিমালা ও উৎপাদন বাড়াতে উদ্যোগ নিলে কেবল সাময়িক নয়, টেকসই সমাধানও সম্ভব। সরকার যদি তা না করে, ভোক্তার আস্থা নষ্ট হয়ে যাবে। অর্থনৈতিক নিরাপত্তা জরুরি।


