একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতে ইসলামী কী কী করেছিল, তা মনে রাখার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। জামায়াতকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘কিছু মানুষ ও গোষ্ঠীর তরফে ইদানীং বিভিন্ন জায়গায় কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ায় বলতে শোনা যায় “অমুককে দেখলাম (ক্ষমতায়), তমুককে দেখলাম, এবার অমুককে দেখুন”। যাদের কথা বলা হচ্ছে তাদেরকে দেশের মানুষ একাত্তর সালেই দেখেছে।”
কোনো দল বা কারো নাম না নিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘যাদের কথা বলা হচ্ছে “অমুককে দেখুন”, তাদেরকে তো দেশের মানুষ একাত্তর সালে দেখেছে। তখন তারা তাদের নিজেদের স্বার্থ রক্ষার্থে কীভাবে লক্ষ মানুষকে হত্যা করেছে। ঠিক যেভাবে পতিত স্বৈরাচার পালিয়ে যাওয়ার আগে হাজারো মানুষকে হত্যা করেছিল ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য। তারা নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষার্থে লক্ষ লক্ষ মানুষকে শুধু হত্যাই করেনি, তাদের সহকর্মীরা কীভাবে মা-বোনদের ইজ্জত পর্যন্ত লুট করেছিল, এ কথাটি আমাদের মনে রাখতে হবে।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা শুনেছি একটি রাজনৈতিক দলের কিছু ব্যক্তি বা বেশকিছু (নেতাকর্মী) বিভিন্ন জিনিসের টিকিট বিক্রি করে বেড়াচ্ছে, বিভিন্ন জিনিসের কনফারমেশন দিয়ে বেড়াচ্ছে। আমি একজন সাধারণ মুসলমান হিসেবে যতটুকু বুঝি, যা আমার না আমি যদি তা দেবার কথা বলি। অর্থাৎ যেটি আমার না সেটির কমিটমেন্ট যদি করি তাহলে আমি তার সাথে পাল্লা দেখছি। অর্থাৎ দোজখ-বেহেশত ও দুনিয়ার সবকিছুর মালিক আল্লাহ। যেটার মালিক আল্লাহ, যেটার কথা একমাত্র আল্লাহতায়ালাই বলতে পারে, সেখানে যদি আমি কিছু বলতে চাই আমার নরমাল দৃষ্টিকোণ থেকে আমি বুঝি যে সেটি হচ্ছে শিরক। এটি শিরকের পর্যায়ে পড়ে।’
তিনি বলেন, ‘তোমাদেরকে (ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের) ঘরে ঘরে যেতে হবে এবং বলতে হবে যারা এসব কথা বলে তারা শিরক করছে। আপনি যদি তাদের কথা শোনেন আপনিও শিরকের পর্যায়ে পড়ে যাবেন।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘পলাতক স্বৈরাচার বিএনপির সম্পর্কে যেভাবে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়াত, আমরা ইদানীং লক্ষ করছি কিছু কিছু ব্যক্তি বা দল ঠিক একই সুরে গান গাইছে বা একই সুরে কথা বলার চেষ্টা করছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তাদেরও তো দুজন ব্যক্তি আমাদের সাথে সেই সময় সরকারে ছিল। এ দুজন ব্যক্তি পৃথিবীতে আর নেই। দুজনেই সিনিয়র রাজনীতিবিদ ছিলেন। তারা গত হয়েছেন। কাজেই যে মানুষ নেই, তাদের সম্পর্কে অবশ্যই খারাপ কথা বলা উচিত নয়। তাদের প্রতি পূর্ণ সম্মান রেখেই বলতে চাই, সেই দুজন ব্যক্তির বিএনপি সরকারে শেষ দিন পর্যন্ত থাকা দুটো জিনিস প্রমাণ করে যৌক্তিকভাবে। এক. তাদের অবশ্যই খালেদা জিয়ার প্রতি পূর্ণ কনফিডেন্স ছিল; দুই. খালেদা জিয়া দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছেন—সেজন্যই তারা শেষ দিন পর্যন্ত ছিলেন।’
উল্লেখ্য, ২০০১-০৬ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের মন্ত্রিসভায় ছিলেন জামায়াতের তৎকালীন আমির মতিউর রহমান নিজামী ও তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ।
তারেক রহমান বলেন, ‘আমি গত ৫ আগস্টের পর থেকে বলে আসছি যে আমাদের সামনের সময়গুলো কিন্তু খুব ভালো নয়, সামনে অনেক কঠিন সময় অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। বিভিন্নভাবে বিভিন্ন রকম ষড়যন্ত্র বিভিন্ন জায়গায় হচ্ছে। এ ষড়যন্ত্র রুখে দিতে পারে এ দেশের জনগণ এবং এ ষড়যন্ত্র জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রুখে দিতে পারে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। এটি রুখে দেয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে গণতন্ত্র, গণতন্ত্র এবং গণতন্ত্র।’
তারেক রহমান বলেন, ‘সরকার গঠনের সুযোগ পাওয়ার সাথে সাথে সর্বপ্রথমে আমাদের ব্যবস্থা করতে হবে দুর্নীতির লাগাম কীভাবে আমরা টেনে ধরব। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির লাগাম কীভাবে আমরা টেনে ধরব।’
এছাড়া বেকার সমস্যা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়নে বিএনপির পরিকল্পনাগুলো তুলে ধরেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।


