Tuesday, June 17, 2025
Home অর্থ-বানিজ্য ২০ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ভাগ্যে কী, লাইসেন্স বাতিলের নোটিশ

২০ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ভাগ্যে কী, লাইসেন্স বাতিলের নোটিশ

উচ্চ খেলাপি ঋণ ও গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে না পারা এবং দীর্ঘদিন ধরে সংকটে থাকা ২০টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের (এনবিএফআই) নিবন্ধন সনদ বা লাইসেন্স বাতিলের উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দিয়ে এনবিএফআইয়ের লাইসেন্স কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে। ১৫ দিনের মধ্যে দিতে বলা হয়েছে এই চিঠির জবাব।কেন্দ্রীয় ব্যাংক-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চিঠির জবাব পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাতে এসব প্রতিষ্ঠান একীভূত বা অবসায়নের উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে।

https://atlasbetr.com

বাংলাদেশ ব্যাংক যে ২০টি প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়েছে, সেগুলো হলো সিভিসি ফাইন্যান্স, বে লিজিং, ইসলামিক ফাইন্যান্স, মেরিডিয়ান ফাইন্যান্স, জিএসপি ফাইন্যান্স, হজ্জ ফাইন্যান্স, ন্যাশনাল ফাইন্যান্স, আইআইডিএফসি, প্রিমিয়ার লিজিং, প্রাইম ফাইন্যান্স, উত্তরা ফাইন্যান্স, আভিভা ফাইন্যান্স, ফিনিক্স ফাইন্যান্স, পিপলস লিজিং, ফার্স্ট ফাইন্যান্স, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, বিআইএফসি, ফারইস্ট ফাইন্যান্স ও এফএএস ফাইন্যান্স।

আলোচিত ব্যক্তি প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারের মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় ছিলো এমন কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানও রয়েছে এই তালিকায়। পি কে হালদার যখন এসব অনিয়ম করেন, তখন তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘনিষ্ঠ মোহাম্মদ সাইফুল আলমের (এস আলম) নিয়ন্ত্রণাধীন একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ছিলেন। পি কে হালদারের মাধ্যমে আর্থিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের পর ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোরও একই দশা করেন এস আলম। তাতে পুরো আর্থিক খাতই এখন ধুঁকছে।

জানা যায়, দেশে মোট এনবিএফআই রয়েছে ৩৫টি। এর মধ্যে ২০টির অবস্থা খুবই নাজুক। গত ডিসেম্বরে এসব প্রতিষ্ঠানের আমানতের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ১২৭ কোটি টাকা, এর মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক আমানত ১৬ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা ও ব্যক্তি আমানত ৫ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বরে এসব প্রতিষ্ঠানের ঋণের পরিমাণ ছিল ২৫ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা। এই ঋণের ৮৩ শতাংশই খেলাপি হয়ে পড়েছে, যার পরিমাণ ২১ হাজার ৪৬২ কেটি টাকা। ঋণের বিপরীতে জামানতের পরিমাণ ৬ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা। জামানতের অর্থ দিয়ে ব্যক্তি আমানতকারীর অর্থ ফেরত দেওয়া সম্ভব। সব মিলিয়ে ২০টি প্রতিষ্ঠানের ক্রম পুঞ্জিত ক্ষতির পরিমাণ ২৩ হাজার ৪৪৮ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব প্রতিষ্ঠান আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে ভালো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উপর। এতে পুরো খাতের ওপর আস্থাহীনতা তৈরি হচ্ছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, চিহ্নিত ২০টি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বছরে বেতন ১৭২ কোটি টাকা ও এমডিদের বেতন ১২ কোটি টাকা। ভাড়া, অন্যান্য খরচসহ সব মিলিয়ে ব্যয় ২০৬ কোটি টাকা। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত কোনো সুদ আয় নেই। তাই আইন অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠন ও একত্রীকরণের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।

সংকটে থাকা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়েছে, এসব প্রতিষ্ঠানে আমানতকারীর দায় পরিশোধে সম্পদের অপর্যাপ্ততা, শ্রেণিকৃত ঋণের উচ্চহার, মূলধন-ঘাটতি তথা ন্যূনতম সংরক্ষিতব্য মূলধন সংরক্ষণে ব্যর্থতাসহ নানা বিষয় পরিলক্ষিত হয়েছে। তাই এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাখ্যা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাওয়া হয়। আইন অনুযায়ী কেন প্রতিষ্ঠানগুলোর লাইসেন্স বাতিল করা হবে না, তা-ও জানাতে হবে।

ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের এমডি কাজী আলমগীর এ বিষয়ে বলেন, আমরা চিঠি পেয়েছি। এখন আলোচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংককে আমাদের কর্মপরিকল্পনা জানিয়ে দেব। ঋণ আদায় করে গ্রাহকের টাকা ফেরত দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি আমরা।

গত বছরের ডিসেম্বর শেষে দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ৭৫ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২৫ হাজার ৮৯ কোটি টাকা খেলাপি, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ৩৩ দশমিক ২৫ শতাংশ। তবে খেলাপি ঋণ ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের তুলনায় কিছুটা কমেছে। সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২৬ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা, যা ছিল মোট ঋণের ৩৫ দশমিক ৫২ শতাংশ। আর ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ২১ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকা, যা ওই সময়ের মোট ঋণের ২৯ দশমিক ২৭ শতাংশ।

অবশ্য ২০টি প্রতিষ্ঠানের উচ্চ খেলাপি ঋণের কারণে পুরো খাতের খেলাপি ঋণ বেশি। ২০ প্রতিষ্ঠানের বাইরে অন্য ১৫ এনবিএফআইয়ের গড় খেলাপি ঋণের হার ৮-এর কম, অনেক ব্যাংকের চেয়েও এই ১৫ প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের অবস্থা ভালো।  এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিস্থিতি আর যাতে খারাপ না হয়, এ জন্য কঠোর তদারকির মধ্যে রাখা হয়েছে।

সূত্র: প্রথম আলো

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

বিতর্কিত তিন জাতীয় নির্বাচনে জড়িতদের ভূমিকা তদন্তে কমিটি গঠনের নির্দেশ

বিতর্কিত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে জড়িত সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনাররা ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিবদের ভূমিকা তদন্তে অবিলম্বে একটি কমিটি গঠনের...

২০২৫ সালে নতুন ভোটার হন ঘরে বসেই আবেদন করবেন যেভাবে

২০২৫ সালের মধ্যে যেসব নাগরিক এখনও জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) পাননি বা নতুন ভোটার হননি, তাদের জন্য রয়েছে দারুণ সুযোগ। এবার ঘরে বসেই অনলাইনে আবেদন...

দর বৃদ্ধির শীর্ষে ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স

দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস সোমবার (১৬ জুন) মোট ৩৯৭ টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এদিন দর...

পোশাক খাতের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ: বিজিএমইএ নবনির্বাচিত সভাপতি

বাংলাদেশের পোশাক শিল্প এমনিতেই স্থানীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কারোপ, উচ্চ ব্যাংক সুদ ও মূল্যস্ফীতিসহ নানা কারণে নিষ্পেষিত দেশের...

Recent Comments