ট্রেনযাত্রীদের দুর্ভোগ যেন থামছেই না। যেকোনো দাবি-দাওয়া আদায়ের জন্য বারবার রেলপথ অবরোধ, ট্রেন ভাঙচুর এবং যাত্রীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে। এতে সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে। ইট-পাটকেলের আঘাতে ট্রেনের জানালার গ্লাস ভেঙে যাত্রীরা আহত হচ্ছেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থেকে যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। যেখানে-সেখানে রেলপথ অবরোধের ফলে নিরাপদ ট্রেনযাত্রা বিঘ্নিত হচ্ছে। একটি স্থানে অবরোধ সৃষ্টি হলে পুরো রেল চলাচল ব্যবস্থা ব্যাহত হয়। ট্রেন দেরি করায় কর্মজীবী মানুষসহ হাজারো যাত্রী চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন। ট্রেন চলাচলে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে না পারলে ভবিষ্যতে যাত্রীদের ভোগান্তি আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সোমবার ঢাকার মহাখালী লেভেল ক্রসিংয়ে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের অবরোধের ফলে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় চরম আকার নেয়। পরদিন মঙ্গলবারও ট্রেনগুলো ৫-৮ ঘণ্টা দেরিতে চলাচল করে। বাধ্য হয়ে রেল কর্তৃপক্ষ কয়েকটি ট্রেনের যাত্রা বাতিল করে। ফলে হাজার হাজার টিকিটের টাকা ফেরত দিতে হয়, যা রেলের জন্য অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রেলওয়ে অপারেশন দপ্তর জানায়, গত ছয় মাসে ঢাকাসহ সারাদেশে ২২ বার রেলপথ অবরোধ হয়েছে। এতে ৩০ ঘণ্টার বেশি সময় ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। এক দিনের অবরোধে প্রায় ৬ কোটি টাকা ক্ষতি হয়। বারবার ট্রেন ভাঙচুরের ঘটনা ঘটায় অনেক কোচ ও ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়েছে। স্বল্পসংখ্যক কোচ নিয়ে ট্রেন চালাতে বাধ্য হচ্ছে কর্তৃপক্ষ। অবরোধের কারণে বিনা টিকিটের যাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে। অনেক যাত্রী ট্রেনের দীর্ঘ বিলম্বে বিরক্ত হয়ে টিকিট না কেটেই ভ্রমণ করছে। ফলে রেলের আয় কমছে। যাত্রীরা ঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে না পারায় তাদের দৈনন্দিন জীবনও ব্যাহত হচ্ছে।ট্রেনচালক ও গার্ডদের নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। পাথর নিক্ষেপের ভয়ে তারা জীবন ঝুঁকিতে রেখে দায়িত্ব পালন করছেন। রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর স্বল্পসংখ্যক সদস্য অবরোধ ঠেকাতে ব্যর্থ হচ্ছে।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ফাহিমুল ইসলাম বলেন, “ট্রেন জনগণের সাশ্রয়ী ও নিরাপদ বাহন। তাই যেকোনো দাবি-দাওয়া আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা উচিত। রেলপথ অবরোধ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।” রেলওয়ে পুলিশপ্রধান সরদার তমিজ উদ্দিন আহমেদ জানান, বারবার ট্রেন আটকানো ও অবরোধ সাধারণ যাত্রীদের আতঙ্কিত করছে। তিনি সবাইকে অনুরোধ করেন, কোনো অবস্থাতেই রেলপথ অবরোধ যেন আন্দোলনের হাতিয়ার না হয়।