২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিতর্কিত ভূমিকার অভিযোগে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনসহ ১০৩ জন পুলিশ কর্মকর্তার বিপিএম ও পিপিএম পদক প্রত্যাহার করা হয়েছে। রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব তৌছিফ আহমদের স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার কারণে তাদের এই রাষ্ট্রীয় সম্মাননা বাতিল করা হয়েছে।
২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচন নিয়ে নানা সময়েই বিতর্ক উঠে এসেছে। বিরোধী দলগুলো এই নির্বাচনে ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলেছিল এবং দাবি করেছিল, প্রশাসনের একটি বড় অংশ বিশেষ করে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পক্ষপাতমূলক আচরণ করেছিল। এই প্রেক্ষাপটে, নির্বাচন সংশ্লিষ্টতা ও দায়িত্ব পালনের ধরন পর্যালোচনা করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের রাষ্ট্রীয় সম্মাননা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, যেসব কর্মকর্তার নাম তালিকাভুক্ত রয়েছে, তারা ওই সময়ে দায়িত্ব পালনকালে নিরপেক্ষতার শর্ত ভঙ্গ করেছেন বলে প্রতীয়মান হয়েছে। ফলে তাদেরকে দেওয়া রাষ্ট্রীয় পদক বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) ও রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম) দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রদান করা হয়। সাধারণত, সাহসিকতা, দক্ষতা, এবং গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের জন্য এই সম্মাননা দেওয়া হয়। কিন্তু বিতর্কিত ভূমিকার জন্য এই পদক প্রত্যাহারের ঘটনা বিরল।
প্রসঙ্গত, চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি ছিলেন। পরে তিনি পদোন্নতি পেয়ে আইজিপি হন এবং দীর্ঘ সময় দায়িত্ব পালন করেন। তার মতো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পদক বাতিলের ঘটনা পুলিশ বাহিনীর ইতিহাসে ব্যতিক্রমী ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এই পদক প্রত্যাহার নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা তৈরি হয়েছে। কেউ কেউ এটিকে ন্যায়বিচারের প্রতিফলন হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ এটিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন। তবে, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জবাবদিহির আওতায় আনতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে সরকারি পদক প্রদান ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব পালনের মানদণ্ডে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বলে মনে করা হচ্ছে।