দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকার ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। গত ৭ থেকে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ৪ দিনের আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলনে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সামনে এই অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ‘লাল ফিতা’ বা প্রশাসনিক জটিলতা কমাতে নেওয়া হচ্ছে কার্যকর উদ্যোগ। একই সঙ্গে গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট সমাধানে শিগগিরই আসছে নতুন জ্বালানি নীতি।
সম্মেলনে অংশ নেন ৪২৫ জন বিদেশি বিনিয়োগকারী, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছিলেন চীনের নাগরিক। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, জাপানসহ বিশ্বের ৪২টি দেশের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। দেশীয় উদ্যোক্তাদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো—সংখ্যা ছিল প্রায় ২ হাজার।
বিনিয়োগকারীদের প্রধান অভিযোগ ছিল লাইসেন্স পেতে দীর্ঘসূত্রতা, আমদানি-রপ্তানিতে করজটিলতা, গ্যাস-বিদ্যুৎ ঘাটতি এবং দুর্নীতি। এসব বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়, রাষ্ট্রীয় কাঠামোর সংস্কার প্রক্রিয়া চলছে। অটোমেশনের মাধ্যমে সেবা প্রদান সহজতর করা হবে। বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন জানান, সরকার বিনিয়োগের প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করে ২০টি সুনির্দিষ্ট সমস্যার সমাধান পরিকল্পনা নিয়েছে, যার বাস্তবায়ন চলতি বছরের মধ্যেই শুরু হবে।
সম্মেলনের বিশেষ দিক ছিল রাজনৈতিক দলের সম্পৃক্ততা। বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করতে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এসব দল জানিয়েছে, ক্ষমতায় গেলেও বিনিয়োগ নীতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হবে।
গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে সম্মেলনে কয়েকটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ পায়। চীনের হান্ডা ইন্ডাস্ট্রিজ বাংলাদেশে ১৫ কোটি ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দেয়। ‘আলি বাবা’ও বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ডিপি ওয়ার্ল্ড, ইনডিটেক্স, গ্রামীণফোন, লাফার্জ হোলসিমসহ অন্যান্য কোম্পানিও বড় অঙ্কের বিনিয়োগ পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে।
বিডার পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সাধারণত সিদ্ধান্ত নিতে ১৮ থেকে ২৪ মাস সময় নেন। তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ, মনিটরিং এবং সমস্যার সমাধানে ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ জোরদার করা হচ্ছে।
সম্মেলনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে বিশ্বের সামনে নতুন বিনিয়োগ গন্তব্য হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেন, “বাংলাদেশ শুধু একটি দেশ নয়, এটি দক্ষিণ এশিয়ার একটি বাজারভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম।” বিস্তৃত জনসংখ্যা ও সম্ভাবনাময় অর্থনীতি দেশের মূল শক্তি হিসেবে তুলে ধরা হয়।
সম্মেলনের শেষ দিনে জানানো হয়, ভবিষ্যতে বিনিয়োগকারীদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ‘পাইপলাইন’ তৈরি হয়েছে এবং এটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।