বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সম্প্রতি একটি গভীর সংকটের সম্মুখীন হয়েছিল, যখন কর্মকর্তাদের মধ্যে একাধিক দাবি ও অস্বস্তির কারণে গত বৃহস্পতিবার থেকে কর্মবিরতির ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে, আজ সকালে সেই কর্মবিরতি প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং বিএসইসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজে ফিরেছেন। তবুও, একটি অস্বস্তি এবং অস্থিরতা বিরাজ করছে সংস্থাটির কর্মকর্তাদের মধ্যে, বিশেষ করে তাদের মধ্যে যাদের মধ্যে কর্মবিরতি নিয়ে প্রতিক্রিয়া ছিল।
গত বুধবার, বিএসইসি নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমানের বাধ্যতামূলক অবসর ঘোষণা করা হয়, যার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ এবং তিন কমিশনারের কাছে চার দফা দাবি পেশ করেন। এই দাবি না মানা হলে, কর্মকর্তারা একেবারে কঠোর পদক্ষেপ নেন। তারা বিএসইসি ভবনের বিদ্যুৎ ও সিসিটিভি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় এবং মূল ভবনের ফটক বন্ধ করে দিয়ে চেয়ারম্যান এবং কমিশনারদের অবরুদ্ধ করে রাখেন।
এ পরিস্থিতি আরও তীব্র হয়ে ওঠে, যখন সেনা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনাস্থলে এসে চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের উদ্ধার করে। উদ্ধার অভিযান চলাকালে কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী আহত হন, যার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবাদস্বরূপ তারা চেয়ারম্যান এবং কমিশনারদের পদত্যাগের দাবিতে কর্মবিরতি শুরু করেন।
এ ঘটনার পর বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ তার গানম্যানের মাধ্যমে শেরেবাংলা নগর থানায় ১৬ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। অভিযুক্তদের মধ্যে সাবেক নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান, মাহবুবুল আলম, রেজাউল করিম এবং অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অন্তর্ভুক্ত। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ ইতোমধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান শুরু করেছে, এবং বিএসইসি ভবনের আশেপাশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
অন্যদিকে, বিএসইসি অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন তাদের এক বিবৃতিতে দেশের পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা জানান, বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বর্তমানে একটি সংকটময় অবস্থায় রয়েছে এবং এই সংকটের দ্রুত সমাধান ছাড়া দেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যত অন্ধকারে যেতে পারে। তাই, তারা সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পুনরায় আহ্বান জানায় এবং পুঁজিবাজারের সুষ্ঠু কার্যক্রম নিশ্চিত করতে একতাবদ্ধভাবে কাজ করার পরামর্শ দেয়।
বিএসইসি অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন আরও বলেছে, বিএসইসি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যে ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন তা দ্রুত সমাধান না হলে দেশের পুঁজিবাজারের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যা আন্তর্জাতিক পর্যায়েও বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে সংকটের মধ্যে ফেলতে পারে। তাই, তারা সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যাতে সংশ্লিষ্ট পক্ষরা এই সংকট সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
এদিকে, বিএসইসি ভবনে পুলিশের প্রস্তুতি রয়েছে। যদি কেউ আবার অফিসে যোগ দেওয়ার চেষ্টা করেন, তবে তাকে গ্রেপ্তার করা হবে, এমন ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন একটি পরিস্থিতি দেশের পুঁজিবাজারের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হতে পারে। যদি কর্মীদের মধ্যে বিভেদ এবং অস্থিরতা অব্যাহত থাকে, তবে তা পুঁজিবাজারের প্রবৃদ্ধির জন্য বড় ধরনের বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। এর ফলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমে যেতে পারে এবং বাজারের স্থিতিশীলতাও হুমকির মুখে পড়তে পারে।
এছাড়া, রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক পদক্ষেপের মাধ্যমে এই সংকট দ্রুত সমাধান না হলে তা আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে। বর্তমান সময়ে দেশে অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি উঠেছে, তারা দ্রুত এবং সুষ্ঠুভাবে পরিস্থিতি সমাধানে এগিয়ে আসুক।
এমন পরিস্থিতির মাঝে, দেশের পুঁজিবাজারের ভবিষ্যত নিয়ে আলোচনা ও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলির দ্রুত সমঝোতার মাধ্যমে সংকটের সমাধান আশা করা হচ্ছে।