টানা পাঁচদিন জ্বর থাকায় মুক্তাগাছা পৌরসভার একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন নেয়ামত উল্লাহ । চারদিন সেবা নেয়ার পরও কোনো উন্নতি না হওয়ায় চিকিৎসক তাকে ঢাকায় রেফার করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পড়ে এ তরুণের। পরে গতকাল সকালে তাকে মেডিসিন বিভাগের পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।
ঢামেক হাসপাতালে নেয়ামত উল্লাহর সঙ্গে আছেন তার মা মাহফুজা আক্তার । জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার ছেলের গত সপ্তাহে হঠাৎ করে মাথা ও শরীর ব্যথা শুরু হয়। কিছুক্ষণ পর শুরু হয় জ্বর। ওষুধ খাওয়ানোর পরও ভালো না হওয়ায় স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চারদিন থাকার পর জ্বর না কমায় ডাক্তার ঢাকায় পাঠিয়ে দেন। এখানে টেস্ট করে বলল ডেঙ্গু হয়েছে।’ ভর্তির পর হাসপাতাল থেকে স্যালাইনসহ অন্যান্য সামগ্রী সরবরাহ করা হলেও তাদের ওষুধ কিনতে হচ্ছে বাইরে থেকে বলে জানান মাফুজা আক্তার ।
বর্ষা শুরুর পর থেকেই সারা দেশে বেড়েছে জ্বরের প্রকোপ। সঙ্গে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও কভিড-১৯-এর নতুন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণের হারও বাড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া গতকালের তথ্য অনুযায়ী, ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৩১৭ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তিনজনের দেহে পাওয়া গেছে কভিডের ভাইরাস। এছাড়া সারা দেশে বেড়েছে সর্দি-কাশি-জ্বর। তবে জ্বরে আক্রান্ত হলেই ডেঙ্গু আতঙ্কে রক্ত পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে ভিড় করছেন অনেকেই।
ঢামেক হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানান, এ হাসপাতালে প্রতিদিনই ২০০-৩০০ জন ডেঙ্গু পরীক্ষা করাচ্ছে। তবে ২০ দিন ধরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ডেঙ্গু ছাড়াও জ্বর নিয়ে অনেকে পরীক্ষা করছেন। ভর্তি জরুরি না হলে ওষুধ ও নিয়মাবলি দিয়ে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। তবে ডেঙ্গু বা কভিডে আক্রান্ত হলে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে ভর্তি করে আনা হচ্ছে চিকিৎসার আওতায়।
মেডিসিন বিভাগের নার্স সালমা আরা বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। আগে এখানে অন্যান্য রোগী থাকলেও জুন থেকে ওয়ার্ডটি ডেঙ্গু রোগীদের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এখন প্রতিদিনই নতুন রোগী আসছে। আজকে (রোববার) নতুন করে চারজন ভর্তি হয়েছে।’
হাসপাতালটিতে রক্ত পরীক্ষার জন্য ভিড় বাড়ায় সেবা দিতে বেগ পেতে হচ্ছে দায়িত্বপ্রাপ্তদের। অনেককে দীর্ঘ সময় ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটতে দেখা গেছে। অনেকেই শরীরে জ্বর নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়েছে টিকিট কাটতে। অনেকে আবার স্বজনদের জন্যও টিকিট কাটছে।
হাসপাতালের ল্যাবরেটরি মেডিসিন ও রক্ত সঞ্চালন বিভাগে কর্মরত এক টেকনোলজিস্ট নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বর্তমানে ল্যাবে দৈনিক আড়াইশর বেশি রোগীর রক্ত পরীক্ষা হচ্ছে। দুই মাস আগেও ডেঙ্গু টেস্টের সংখ্যা ছিল ১০-১২টি।
এদিকে দেশে ২৪ ঘণ্টায় এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরো ৩১৭ জনের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার তথ্য গতকাল দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ নিয়ে চলতি বছর হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ১২ হাজার ২৭১-এ। এদের মধ্যে ১ হাজার ৯৭৫ জন ভর্তি হয় চলতি মাসে। এছাড়া জানুয়ারিতে ১ হাজার ১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪ জন, মার্চে ৩৩৬ জন, এপ্রিলে ৭০১ জন, মে মাসে ১ হাজার ৭৭৩ জন ও জুনে হাসপাতালে ভর্তি হন ৫ হাজার ৯৫১ ডেঙ্গু রোগী।
ডেঙ্গু নিয়ে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে ১ হাজার ২২৮ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ৩৪৯ জন এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ৮৭৯ জন চিকিৎসা নিচ্ছে। চলতি বছর এখন পর্যন্ত মশাবাহিত এ রোগে মৃত্যু হয়েছে ৪৫ জনের। গেল বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১ লাখ ১ হাজার ২১১ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়। মৃত্যু হয় ৫৭৫ জনের।
ডেঙ্গু আক্রান্তের দিক দিয়ে এবার এগিয়ে রয়েছে উপকূলীয় জেলা বরগুনা। নতুন করে আরো ১০২ ডেঙ্গু রোগী জেলাটির বিভিন্ন হাসাপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে বরগুনা সদর উপজেলারই রয়েছে ৭৬ জন। এছাড়া পাথরঘাটা উপজেলার ১২ জন এবং তালতলী ও বামনা উপজেলায় সাতজন করে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। জেলায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছে মোট ২২৭ জন। এদের মধ্যে
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বুলেটিনে বলা হয়, রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু নিয়ে দেশে সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হয় বরিশাল বিভাগে; ১২৭ জন। এর বাইরে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় ৪৮ জন, ঢাকা বিভাগে ৫২ জন।