দীর্ঘদিন ধরে দেশে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ। স্থানীয় উৎপাদন থেকেই চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ হচ্ছে বাজারে। তবে এখন মৌসুমের শেষে মজুদ কমে আসায় বাড়তে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম। বছরজুড়ে স্থিতিশীল থাকলেও তিনদিনের ব্যবধানে কেজিতে দাম বেড়েছে প্রায় ১৫ টাকা।
দেশের পেঁয়াজ উৎপাদনকারী জেলাগুলোয় দাম বেড়ে যাওয়ায় বাজারে প্রভাব পড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। দিনাজপুরের হিলিতে দুদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ২০-৩০ টাকা। গতকাল হিলি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ছিল ৮০-৯০ টাকা, দুদিন আগেও যা বিক্রি হয়েছে ৬০-৬৫ টাকায়।
হিলি বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা আবুল হাসনাত বলেন, ‘এতদিন দেশী পেঁয়াজের সরবরাহ ভালো থাকায় দাম স্থিতিশীল ছিল। কিন্তু বর্তমানে মোকামগুলোয় পেঁয়াজের সরবরাহ কমেছে, যার প্রভাব পড়েছে মসলাপণ্যটির দামে।’
ডিসেম্বরের শেষার্ধে কিংবা জানুয়ারির শুরুতে দেশে মুড়িকাটা পেঁয়াজের উত্তোলন মৌসুম শুরু হবে। ফলে আগামী অন্তত দুই মাস দেশে পেঁয়াজের সরবরাহ ধারাবাহিকভাবে কমবে। এ কারণে সামনের দুই মাস পেঁয়াজের বাজার চড়া থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
দেশে রবি মৌসুম শুরু হয় অক্টোবরের মাঝামাঝি। এরই মধ্যে পাবনা, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ীসহ দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় পেঁয়াজের রোপণ মৌসুম শুরু হয়েছে। বিলম্বিত বৃষ্টিপাতের কারণে রোপণ কয়েকদিন দেরিতে শুরু হওয়ায় নতুন পেঁয়াজ আসতেও কিছুটা বেশি সময় লাগবে। ওই সময় পর্যন্ত বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত না করা গেলে দেশে পেঁয়াজের দাম আরো বাড়তে পারে। এক্ষেত্রে পেঁয়াজ আমদানির আইপি (আমদানি অনুমোদন) দেয়া না হলে সামনের দিনে বাজার অস্থিতিশীল হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, দীর্ঘদিন মাচায় মজুদ থাকায় শুকিয়ে পেঁয়াজের ওজন কমে যায়। এ কারণে বর্তমানে ব্যাপারী ও কৃষক পর্যায় থেকে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহের সময় মুনাফা বজায় রাখতে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। এতেও বাড়ছে পেঁয়াজের দাম।
দেশে দুই ধাপে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। রবি মৌসুমের শুরুতে পেঁয়াজের চারা (মুড়িকাটা) রোপণ করা হয়। এ জাতের পেঁয়াজ দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায় না। উৎপাদন মৌসুমেই এসব পেঁয়াজ বিক্রি ও ভোগ করে সাধারণ ভোক্তারা। মুড়িকাটা পেঁয়াজ উত্তোলন শেষ হলে একই জমিতে কৃষক হালি বা বীজ পেঁয়াজ রোপণ করেন। এ পেঁয়াজ মাচা বা বিভিন্ন সংরক্ষণ ঘরে দীর্ঘদিন মজুদ রাখা হয়। দীর্ঘদিন ধরে দেশে পেঁয়াজ আমদানিতে আইপি দিচ্ছে না সরকার। এতে বাজার দেশীয় উৎপাদনের ওপর নির্ভরশীল হয়েছে এবং একটা নির্দিষ্ট দামে পৌঁছে পেঁয়াজের দাম স্থির ছিল। কিন্তু এখন মৌসুম শেষ হয়ে আসায় দাম কিছুটা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জের মেসার্স আল্লার দান বাণিজ্যালয়ের স্বত্বাধিকারী মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘পেঁয়াজের মজুদ কমে আসায় বাজারে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। এ বছর পেঁয়াজ উৎপাদনে কৃষক ও ব্যাপারী পর্যায়ে ভালো লাভ পাওয়ায় আগামী মৌসুমে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অনেক কৃষক আগের তুলনায় বাড়তি জমিতে পেঁয়াজ রোপণ করেছেন।’ ফলে মৌসুমের শেষ দিকে দাম কিছুটা বাড়তি থাকলেও পেঁয়াজের দেশীয় উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণতার দিকে এগোচ্ছে বলে মনে করছেন তিনি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, চট্টগ্রামের ভোক্তারা সবচেয়ে বেশি ভারতীয় পেঁয়াজের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। বিগত এক-দেড় বছর চাহিদা অনুপাতে ভারতীয় পেঁয়াজ না আসায় দেশী পেঁয়াজের ওপর নির্ভরশীলতা বেড়েছে। আগে প্রতিদিন সরবরাহ হওয়া পেঁয়াজের ৯০ শতাংশই ছিল ভারতের নাসিক ও দক্ষিণের বিভিন্ন জেলার পেঁয়াজ। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিদিন ২০-২৫ ট্রাক পেঁয়াজ চট্টগ্রামে আসছে। তবে মৌসুম শেষ হয়ে আসায় ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি পেতে চেষ্টা করছেন ব্যবসায়ীরা। দেশী পেঁয়াজের সরবরাহ আরো বেশি কমে যাওয়ার আগেই বাজার স্থিতিশীল রাখতে বিকল্প উৎস থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন তারা।


