চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেনটেটিভ ড. খলিলুর রহমান। তিনি জানান, সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফরের মাধ্যমে দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাসে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।
রোববার (৩০ মার্চ) দুপুরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান। সংবাদ সম্মেলনে ড. খলিলুর রহমান বলেন, “বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে যে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল, এই সফরের ফলে তা কমানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে। চীনের সঙ্গে ১ বিলিয়ন আরএমবির একটি বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক হবে।”
তিনি আরও বলেন, “শিল্পায়ন ও পানিসম্পদ খাতে চীনের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। ড. ইউনূস আগামী ৫০ বছরের জন্য পানির চাহিদা পূরণে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা কামনা করেছেন, যা চীন গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে।”
বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ বৃদ্ধির আহ্বান জানানো হয়েছে বলে জানান খলিলুর রহমান। তিনি বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা চীনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করেছেন, যাতে তারা বাংলাদেশে এসে শিল্প কারখানা স্থাপন করে। এই প্রস্তাব চীনা প্রেসিডেন্ট গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করেছেন।” বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী জানান, “সফরে চীনের শতাধিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল বিনিয়োগ আকর্ষণ করা, যাতে দেশের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হয়। আগের মতো লোন নির্ভর উন্নয়ন না করে বিনিয়োগ-নির্ভর অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে চাচ্ছি।”
তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনা প্রকল্প নিয়ে চীন ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে বলে জানান খলিলুর রহমান। তিনি বলেন, “চীন এ প্রকল্পের উন্নয়নে সহায়তা দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এটি বাস্তবায়িত হলে উত্তরাঞ্চলের কৃষি ও অর্থনীতি ব্যাপকভাবে লাভবান হবে।”
এছাড়া রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে চীনের সহযোগিতার প্রতিশ্রুতির কথাও উঠে আসে সংবাদ সম্মেলনে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, “চীন বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করেছে যে তারা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় সক্রিয় ভূমিকা রাখবে।”
চীন সফরকে ঐতিহাসিক বলে আখ্যা দিয়েছেন খলিলুর রহমান। তিনি বলেন, “এই সফর শুধু বাণিজ্য নয়, সার্বিক কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। আমরা আশা করি, এর সুফল দ্রুতই দৃশ্যমান হবে।”