চিকিৎসা শেষে দীর্ঘ চার মাস পর দুই পুত্রবধূ জোবায়দা রহমান ও সৈয়দা শর্মিলা রহমানকে সঙ্গে নিয়ে যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে আজ (মঙ্গলবার) দেশে ফিরছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
খালেদা জিয়াকে বহনকারী কাতারের রাজপরিবারের বিশেষ বিমান (এয়ার অ্যাম্বুলেন্স) স্থানীয় সময় ৪টা ৩৫ মিনিট ও বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ৩৫ মিনিটে লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দর ত্যাগ করে। পথে কাতারের রাজধানী দোহায় যাত্রাবিরতি শেষে আজ (মঙ্গলবার) সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের কথা রয়েছে এই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের।
বিমানবন্দরে তাদের অভ্যর্থনা জানাবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির নেতারা। এ ছাড়া বিমানবন্দর থেকে গুলশান পর্যন্ত পুরো পথে দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকরাও খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানানোর প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। তবে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কথা বিবেচনায় নিয়ে নেতাকর্মীদের সড়কে ভিড় না করে ফুটপাতে অবস্থান নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একইসঙ্গে কেউ যাতে সড়কে নামতে না পারে, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবস্থা নেয়ারও অনুরোধ করেছেন তিনি।
লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদায় জানান বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি নিজে গাড়ি চালিয়ে বাসা থেকে মাকে বিমানবন্দরে নিয়ে যান।
একই গাড়িতে দাদির পেছনে বসা ছিলেন তারেক রহমানের মেয়ে জাইমা রহমান। সেখানে আগে থেকে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার নিয়ে হাজারো নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, নেতাকর্মীরা দলীয় ও জাতীয় পতাকা হাতে রাস্তার এক পাশে ফুটপাতে দাঁড়াবেন। খালেদা জিয়ার গাড়ির পেছনে মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে যাওয়া যাবে না। গাড়ির পেছনে হেঁটেও যাওয়া যাবে না। এ ছাড়া বিমানবন্দরের ভেতরে ও খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসভবনে কেউ প্রবেশ করতে পারবেন না।
জোবায়দা রহমান প্রায় ১৭ বছর পর দেশের মাটিতে পা রাখছেন। জীবনের ঝুঁকি থাকায় তাকে বিশেষ নিরাপত্তা দেবে পুলিশ। তবে তাকে নিরাপত্তা দেয়ার নামে প্রতিবেশীদের বিরক্ত না করতে দলীয় নেতাকর্মীসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন তারেক রহমান। গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের ভাড়া বাসা ‘ফিরোজা’ এবং ধানমন্ডিতে জোবায়দা রহমানের বাবার বাসা ‘মাহবুব ভবন’ প্রস্তুত করা হয়েছে। সেখানে জোরদার করা হয়েছে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গুলশান-বনানী থেকে বিমানবন্দর সড়কে অবস্থান না করে ফুটপাতে দাঁড়াতে ডিএমপির পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এ সময় ব্যাগ ও লাঠি বহন করা যাবে না। দলীয় নেতাদের স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েন করে এ বিষয়ে সহায়তার কথা বলা হয়েছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত নির্দিষ্ট গতিসীমা ও লেন মেনে মোটরসাইকেল চলতে পারবে। টঙ্গী ও তেজগাঁও স্টেশনে আন্তঃনগর ট্রেনগুলো ২ মিনিট করে থামবে। কমলাপুর-টঙ্গী রুটে চলবে অতিরিক্ত শাটল ট্রেন। হজযাত্রী, বিদেশগামী যাত্রী ও এসএসসি পরীক্ষার্থীদের যথেষ্ট সময় নিয়ে বের হওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত হালকা যানবাহনের জন্য জিয়া কলোনি-জাহাঙ্গীর গেট-সৈনিক ক্লাব-স্টাফ রোড খোলা থাকবে।
কামারপাড়া-ধউর ব্রিজ-পঞ্চবটী-মিরপুর বেড়িবাঁধ-গাবতলী রুট, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, হাউজ বিল্ডিং-জমজম টাওয়ার-মেট্রোরেল উত্তর স্টেশন-মিরপুর ডিওএইচএস, গুলশান-১/পুলিশ প্লাজা-মহাখালী র্যাম্প হয়ে এক্সপ্রেসওয়ে, মহাখালী থেকে ময়মনসিংহ/টাঙ্গাইলগামী যানবাহনের জন্য গাবতলী রুট, এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচলকারী যানবাহনের জন্য বনানী-কাকলী র্যাম্পের বদলে মহাখালী/এফডিসি র্যাম্প ব্যবহারের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির দেয়া বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ৮ জানুয়ারি খালেদা জিয়া লন্ডন যান। ৭৯ বছর বয়সী সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ শারীরিক নানা জটিলতায় ভুগছেন।