বাংলাদেশ সচিবালয়ে আবারও উত্তেজনা তৈরি হয়েছে প্রশাসন ক্যাডারের ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তাদের সক্রিয়তায়। দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চনার অভিযোগ তুলে আসা শতাধিক অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব সোমবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে তাদের পদোন্নতির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আবেদন জমা দিয়েছেন।বঞ্চিত কর্মকর্তাদের দাবি, অতীতে স্বৈরাচারী শাসনের সময় তারা বিভিন্নভাবে অবহেলিত হয়েছেন। পদোন্নতির স্বাভাবিক প্রক্রিয়া অনুসরণ না করায় অনেক যোগ্য কর্মকর্তা বঞ্চিত থেকে গেছেন, অথচ কিছু কর্মকর্তা নিয়ম বহির্ভূতভাবে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি পেয়েছেন। ফলে প্রশাসনের ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে এবং সত্যিকারের যোগ্য কর্মকর্তারা ন্যায়বিচার পাননি।
বঞ্চিত কর্মকর্তারা একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছেন, যা তাদের অভিযোগ তদন্ত করে দ্রুততম সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি পাওয়া অনেকের বিরুদ্ধে নানান অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। অনেকে দ্বৈত নাগরিকত্বধারী, কেউ কেউ স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন, আবার কেউ দুর্নীতির কারণে চাকরিচ্যুত হয়েছেন। এ অবস্থায়, তাদের পদোন্নতি যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে হয়েছে কিনা তা পুনর্মূল্যায়ন করা দরকার বলে দাবি জানিয়েছেন তারা। এদিকে, বঞ্চিত অতিরিক্ত সচিবরা শুধু পদমর্যাদার স্বীকৃতি চাইলেও কোনো আর্থিক সুবিধার দাবি করেননি। তারা মনে করেন, সরকারি চাকরিজীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে অন্যায়ভাবে বঞ্চিত হওয়াটা শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়, বরং প্রশাসনিক কাঠামোর ন্যায্যতার ওপরও প্রভাব ফেলে।
সোমবার সচিবালয়ের লাইব্রেরিতে এক সভার আয়োজন করেন অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিবরা। সেখানে ড. মো. নাসির উদ্দিনকে আহ্বায়ক ও আব্দুল মান্নান ইলিয়াসকে সদস্য সচিব করে “বঞ্চিত অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব ফোরাম” গঠিত হয়। সভায় বক্তারা জানান, ফ্যাসিবাদের সময় পদোন্নতির সুযোগ থেকে বঞ্চিত ৫১২ জন অতিরিক্ত সচিবের মধ্যে মাত্র কিছু সংখ্যক কর্মকর্তাকে সচিব পদে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, যারা চাকরিজীবনে কখনো পদোন্নতিতে বঞ্চিত হননি, তারাও ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি পেয়েছেন, যা স্পষ্ট বৈষম্যের ইঙ্গিত দেয়।বক্তারা আরও অভিযোগ করেন, কে কী কারণে পদোন্নতি বঞ্চিত হয়েছেন, তা প্রকাশের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত সেই তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। ফলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তারা এই তথ্য অবিলম্বে প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন এবং প্রকৃত বঞ্চিতদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কী সিদ্ধান্ত নেয়, সেটিই এখন দেখার বিষয়।