বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে সরকারের মেয়াদ ও আসন্ন নির্বাচনের বিষয় নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। আলজাজিরাকে দেওয়া এই সাক্ষাৎকারে, ড. ইউনূস জানিয়েছেন যে, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ চার বছরের বেশি হবে না, তবে সময়সীমা নির্ভর করছে জনগণ এবং রাজনৈতিক দলের চাহিদার ওপর। তিনি বলেন, “আমরা অন্তর্বর্তী সরকার, স্থায়ী সরকার নয়। সরকার পরিচালনার মেয়াদ পাঁচ বছর হলেও নতুন সংবিধানে এটি সম্ভবত চার বছর হতে পারে, কারণ জনগণ কম সময় চান।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, “সরকারের মেয়াদ চার বছরের কম হওয়া উচিত এবং এটি কমও হতে পারে। এই সিদ্ধান্ত জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ওপর নির্ভর করবে।” এ সময়, ড. ইউনূস বলেন যে, সরকার ক্ষমতায় আসার পরই তাদের উদ্দেশ্য হবে যত দ্রুত সম্ভব সংস্কারের পর নির্বাচন আয়োজন করা। ১৬ বছরের দুর্নীতিগ্রস্ত বাংলাদেশের অবস্থা থেকে দেশকে উত্তরণের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করছে।
এছাড়া, তিনি বাংলাদেশের সরকারব্যবস্থা সংস্কারের কথা উল্লেখ করে বলেন, পুরো সরকার ব্যবস্থা নতুন করে সংস্কার হবে। জনগণ নতুন কিছু চায় এবং সেই লক্ষ্যে সমস্ত ক্ষেত্রেই সংস্কার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সংবিধান সংশোধনসহ নানা সংস্কারের জন্য কমিশনও গঠন করা হয়েছে। তিনি জানান, “নির্বাচন এবং সংস্কারের প্রক্রিয়া একসঙ্গে চলছে, এবং জনগণের মতামত ভিত্তিক কাজ হচ্ছে।”
ড. মুহাম্মদ ইউনূস আরো বলেন, কোনো কিছু জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে না। অন্তর্বর্তী সরকার জনগণকে জিজ্ঞেস করছে, “তোমরা কি এখনই নির্বাচনে যেতে চাও, নাকি সংস্কার শেষ হওয়ার পরে নির্বাচন চাও?”
তবে, ড. ইউনূস একদিকে যেমন দেশের মধ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতার কথা তুলে ধরেন, তেমনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ঘিরে কিছু মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “শেখ হাসিনা ভারতে বসে বাংলাদেশের অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন। সেখানে বসে তিনি বাংলাদেশে বিক্ষোভের ডাক দিচ্ছেন, যা দেশের জন্য ক্ষতিকর।”
শেখ হাসিনাকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করার বিষয়ে, ড. ইউনূস বলেন, “ভারতও তাকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেছে, আর বাস্তবতাও তা-ই।” তিনি আরও জানান, “আইনি প্রক্রিয়া চলছে, এবং যদি শেখ হাসিনা দোষী সাব্যস্ত হন, তবে তার দেশে প্রত্যাবর্তন চাওয়া হবে।”
এদিকে, তিনি সতর্ক করেন যে, কোনো ধরনের অস্থিতিশীলতা দেশের জন্য ভালো নয় এবং এই পরিস্থিতিতে ভারতকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এভাবেই, ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের ভবিষ্যত নির্বাচন এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তার ভাবনা তুলে ধরেছেন।


